22 May 2022 Bengali Murli Today | Brahma Kumaris
Read and Listen today’s Gyan Murli in Bengali
21 May 2022
Morning Murli. Om Shanti. Madhuban.
Brahma Kumaris
আজকের শিব বাবার সাকার মুরলি, বাপদাদা, মাধুবন। Brahma Kumaris (BK) Murli for today in Bengali. This is the Official Murli blog to read and listen daily murlis.
"বিশ্ব পরিবর্তনে তীব্রতা আনার সাধন একাগ্রতার শক্তি এবং একরস স্থিতি"
আজ দূরদেশী বাবা তাঁর আপন দূরদেশী আর দেশী বাচ্চাদের মিলনের অভিনন্দন জানাতে এসেছেন। তোমরাও সবাই দূরদেশ থেকে এসেছ। বাবাও দূরদেশ থেকে এসেছেন। বাচ্চারা বাবাকে অভিবন্দনা জানাতে এসেছে আর বাবা বাচ্চাদের পদম্ গুন অভিনন্দিত করেন। উদযাপন করা অর্থাৎ সমান বানানো। দুনিয়ার মানুষ শুধু উদযাপন করে কিন্তু বাবা পালন করেন অর্থাৎ তোমাদের তাঁর সমান বানান। সব বাচ্চারা, হয় তোমরা সাকার রূপে সামনে আছ অথবা কেউ আকার রূপে সামনে আছে, বাচ্চারা সকলে বিশ্বের কোণে কোণে বাবার হীরে সম জয়ন্তী উদযাপন করছে। বাপদাদাও আকার রূপে সমুখ বাচ্চাদের হিরেতুল্য পদ্মাপদম্ অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অবতরিত হওয়ার এই মহান জয়ন্তী উদযাপন করে তোমরা বাচ্চারা সবাই নিজেরাও হিরেসম হয়ে গেছ। একে বলা হয়ে থাকে উদযাপন অর্থাৎ সমান হয়ে যাওয়া। প্রত্যেক বাচ্চার কপালে পদ্মাপদম্ ভাগ্যবান হওয়ার নক্ষত্র ঝলক দিচ্ছে। তো উদযাপন করতে করতে সদাসর্বদার জন্য ভাগ্যবান হয়ে গেছে। এমন অলৌকিক জয়ন্তী সারা কল্পে কেউই উদযাপন করে না। যদিও তারা মহান আত্মাদের জন্মজয়ন্তী পালন করে, তবুও সেই মহান আত্মারা তাদের জয়ন্তী পালনকারীদের মহান বানায় না। এই সঙ্গমেই তোমরা সব বাচ্চা পরমাত্মার জয়ন্তী উদযাপন করে মহান হয়ে যাও। শ্রেষ্ঠ থেকে আরও শ্রেষ্ঠ আত্মা হয়ে যাও। তোমরা এমন হীরে সম জীবন বানাও যাতে জন্ম- জন্মান্তর হীরে আর রত্নরাজি দিয়ে খেলতে থাকো। আজকের স্মারক দিবস শুধু বাবার নয়, বরং বাচ্চাদেরও বার্থ ডে, কারণ যখন বাবা অবতরিত হন তখন বাবার সঙ্গে ব্রহ্মা দাদা, রূপান্তরিত আত্মাও অবতরিত হন। বাবা আর দাদা উভয়ের একসাথে অবতরণ হয়। ব্রাহ্মণ ব্যতীত বাপদাদা স্থাপন-যজ্ঞ রচনা করতে পারেন না, সেইজন্য বাপদাদা আর ব্রাহ্মণ বাচ্চারা সাথে সাথে অবতরিত হন। তাহলে কার জন্ম দিন বলবে – তোমাদের নাকি বাবার ? তোমাদেরও তো না ! তাইতো তোমরা বাবাকে অভিবাদন করো আর বাবা তোমাদের অভিনন্দিত করেন।
শিব জয়ন্তী অর্থাৎ পরমাত্ম- জয়ন্তীকে মহাশিবরাত্রি কেন বলা হয় ? শুধু শিবরাত্রি বলে না, কারণ এই অবতরিত দিবসে শিববাবা ব্রহ্মা দাদা আর ব্রাহ্মণেরা মহান সঙ্কল্পের ব্রত নিয়েছেন যে পবিত্রতার ব্রত দ্বারা বিশ্বকে মহান ও শ্রেষ্ঠ বানাবেন। বিশেষভাবে আদি দেব ব্রহ্মা, তাঁর আদি ব্রাহ্মণ বাচ্চাদের সাথে এই মহান ব্রত নেওয়ার নিমিত্ত হয়েছেন, সুতরাং মহান বানানোর ব্রত নেওয়ার দিব্য দিবস, সেইজন্য মহা শিবরাত্রি বলা হয়ে থাকে। আর তোমরা ব্রাহ্মণ বাচ্চারা এই মহান ব্রত নিয়েছ, তার স্মারকচিহ্ন রূপে আজও ভক্তগণ ব্রত রাখে। এই মহান জয়ন্তী প্রতিজ্ঞা নেওয়ার জয়ন্তী। একদিকে প্রত্যক্ষ হওয়ার জয়ন্তী, অন্যদিকে প্রতিজ্ঞা নেওয়ার জন্মদিন। আদি সময়ে যারা নিমিত্ত হয়েছে, আদি দেবের সাথে আদি রত্নরূপে তারাই বের হয়েছে, তাদের প্রতিজ্ঞার প্রত্যক্ষ ফল রূপে তোমরা সবাই প্রত্যক্ষ হয়েছ। দেখো, কোথায় কোথায় কোণে কোণে তোমরা চলে গিয়েছিলে, কিন্তু বাবা মাটিতে লুকিয়ে থাকা হীরেতুল্য আপন বাচ্চাদের খুঁজে নিয়েছেন, নিয়েছেন না ? এখন তো বিশ্বের কোণে কোণে তোমরা হোলিয়েস্ট আর হাইয়েস্ট হীরা ঝিলমিল করছ। এ’ হ’লো পরমাত্ম-জয়ন্তীর ব্রত আর প্রতিজ্ঞার ফল। তোমরা সবাই এখনও চারিদিকে শিববাবার ধ্বজার সামনে প্রতিজ্ঞা করো, তাই না ! তো এই আদি প্রথার বিধি তোমরা এখনও করে চলেছ। এই পরমাত্ম-জয়ন্তী যাকে শিবরাত্রিও বলা হয়। রাত্রি অর্থাৎ অন্ধকার। যে ব্যক্তি বা যে বস্তু ঠিক যেমন হয় অন্ধকারে তেমন ভাবে তাকে দেখা যায় না। বিদ্যমান হওয়া সত্ত্বেও দেখা যায় না। যখন বাবা অবতরিত হন, প্রকৃতপক্ষে তোমরাও যেমন, না নিজেরা নিজেদের দেখতে পেতে, না বাবাকে দেখতে বা জানতে, এমনকি, ‘আমি আত্মা’ হয়েও তা’ জ্ঞান ও অনুভবের নেত্র দ্বারা দেখতে অপারগ ছিলে। নেত্র থাকা সত্ত্বেও অন্ধকারে ছিলে। নেত্র যথার্থ কার্য করছিল না। স্পষ্ট দেখা যেত না। তাহলে তোমরাও অন্ধকারে ছিলে তো না ! নিজেকেই দেখতে পেতে না, সেইজন্য তখন বাবা প্রথমে এই অন্ধকার সরিয়ে দেন। সুতরাং শিবরাত্রি অর্থাৎ অন্ধকার সরিয়ে প্রকৃত সত্যের প্রকাশ প্রজ্জ্বলিত হওয়া। এই কারণে শিবরাত্রি নামে উদযাপিত হয়। ভক্তিমার্গের সব বিধিও তোমাদের যথার্থ বিধির স্মরণিক। একদিকে ভক্তের বিধি আরেকদিকে বাচ্চাদের সম্পূৰ্ণ বিধি। উভয়ই দেখে বাবা উৎফুল্ল হন। তোমরাও উৎফুল্ল হও তো না যে আমাদের ভক্ত ফলো করতে কত সতর্ক ! লাস্ট জন্ম পর্যন্তও নিজের ভক্তির বিধি পালন করে আসছে। এই সবই বাবা আর তোমরা সব বিন্দুরূপের চমৎকারিত্ব ! শিববাবার সাথে শালগ্রামেরও পূজন হয়ে থাকে। তোমরা সবাই বিন্দু স্বরূপের মাহাত্ম্য জানো, সেইজন্য আজ পর্যন্ত ভক্তদের মধ্যে শিব অর্থাৎ বিন্দু স্বরূপের মহত্ত্ব বিদ্যমান। তারা শুধু বিন্দু রূপকে জানে, যথার্থ ভাবে জানে না, তারা নিজেদের মতো করে জানে। কিন্তু তোমরা বাবাকে শুধুমাত্র বিন্দুরূপে জানো না, বরং বিন্দুর সাথে যে সমুদয় ভাণ্ডারের সিন্ধু আছে, বিন্দুর সাথে সেই সিন্ধু রূপকেও তোমরা জানো। দুই রূপেই তাঁকে জেনেছ, জেনেছ না? সিন্ধু স্বরূপকে জেনে তোমরাও মাস্টার সিন্ধু হয়ে গেছ। তোমাদের মধ্যে কত খাজানা পরিপূর্ণ হয়ে আছে – হিসেব করতে পারবে ! অগণিত, অনন্ত আর অবিনাশী ধনভাণ্ডার। সবাই তোমরা মাস্টার সিন্ধু হয়েছ তো না ? নাকি এখন হতে হবে ?
তপস্যার বছরে কী করবে ? তপস্যা অর্থাৎ যে সঙ্কল্পই করবে তা’ দৃঢ়তার সাথে। তপস্যা অর্থাৎ একাগ্রতা আর দৃঢ়তা। যোগী জীবনে তো এখনো আছ। তোমাদের সকলের যোগী জীবন, তাই না ? নাকি ৮ ঘন্টা, ৬ ঘন্টা অথবা কিছু ঘন্টার যোগে থাকো ? যোগী জীবন তো অবশ্যই, তবুও কেন বিশেষভাবে তপস্যা-বর্ষ রাখা হয়েছে? যোগী জীবন যুক্ত সব বাচ্চাকে বাপদাদা যোগী আত্মারূপে দেখেন আর তোমরা আছও যোগী জীবনে। অন্য জীবন তো সমাপ্ত হয়ে গেছে। লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো ভোগী জীবনে ক্লান্ত হয়ে নিরাশ হয়ে বিচার বিবেচনা করে বুঝে যোগী হয়েছ। বিচার বিবেচনা করে হয়েছ নাকি কারও বলায় হয়ে গেছ? অনুভব করে হয়েছ নাকি শুধু অনুভব শুনে হয়ে গেছ? অনুভাবী হয়ে যোগী হয়েছ নাকি শুধু শুনলে আর দেখলে তো ভালো লেগে গেছে? শুধু দেখে সওদা করেছ, নাকি শুনে সওদা করেছ? কোথাও কারও দ্বারা ভুলপথে চালিত হয়ে তবে আসনি তো? ভালো করে দেখে বুঝে নিয়েছ? এখনও দেখে নাও। কোনো জাদু মন্ত্র তোমাদের উপরে লাগেনি তো? তিন নেত্র খুলে সওদা করেছ? কেননা, বুদ্ধিও তোমাদের একটা চোখ। এই দুই নেত্র আর বুদ্ধি-নেত্র, তিন নেত্র খুলেই সওদা করেছ। সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ?
সব বাচ্চা মিষ্টি মিষ্টি আত্মিক বার্তালাপ করে। বলে – বাবা আমি তো তোমারই, আর কোথাও তো যাবই না। জ্ঞানী-যোগী জীবন তোমাদের খুব ভালো লাগে, কিন্তু অল্পস্বল্প কোনো না কোনো বিষয়ে সহন করতে হয়। সেই সময় তোমাদের মন আর বুদ্ধি চঞ্চল হয়ে যায়, এই জিনিস কতদূর পর্যন্ত চলবে, কীভাবে হবে…? মাঝে মাঝে যে অস্থিরতা হয় তা’ কখনো কখনো নিজের প্রতি, কখনো সেবাতে অথবা কখনো সাথীদের ক্ষেত্রে – এই অস্থিরতা নিরন্তর হওয়ায় বিভেদ তৈরি করে। তাইতো সহন শক্তির পার্সেন্টেজ সামান্য কম হয়ে যায়। স্থির নিশ্চয় তোমরা, কিন্তু স্থির নিশ্চয় যাদের, তাদেরকেও এইসব বিষয় মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দেয়। সুতরাং তপস্যা-বর্ষ অর্থাৎ সর্ব গুণে, সর্ব শক্তিতে, সর্ব সম্বন্ধে, সকল স্বভাব-সংস্কারে শতকরা ১০০ ভাগ পাস হওয়া। এখন তোমরা পাস করেছ, কিন্তু ফুল পাস নয়। এক হয় পাস, আরেক হয় ফুল পাস, আর তৃতীয়তঃ পাস উইথ অনার। সুতরাং তপস্যা-বর্ষে যদি অল্প মাত্রই পাস উইথ অনার হয় তাহলে ফুল পাস তো সবাই হতে পারে। আর যেকোন পেপার আসাই হ’লো ফুল পাস হওয়ার জন্য সবথেকে সহজ সাধন এবং এই তপস্যা-বর্ষেও পেপার আসবে। এমন নয় যে আসবে না, কিন্তু পেপার মনে করে পাস করো। পরিস্থিতিকে পরিস্থিতি মনে ক’রো না, পেপার মনে করো। স্টুডেন্ট পেপারের কোশ্চেনের বিস্তারে যায় না, বলে না – এটা কেন এলো, কীভাবে এলো, কে করেছে ? পাস হওয়ার পেপার মনে করে পার করে। সুতরাং পেপার মনে করে পাস করো। এ’ কী হয়ে গেল, কীভাবে এ’রকম হয়ে গেল, তোমাদের দুর্বলতাতেও এটা ভেবো না যে, এতো হয়েই থাকে। নিজের জন্য ভাবছ – এতো হয়ই, এতটুকু তো হবেই আর অন্যদের ক্ষেত্রে ভাবছ এটা কেন করেছে, কী করেছে ! এই সব বিষয়কে পেপার মনে করে ফুল পাস হওয়ার লক্ষ্য রেখে পাস করো। পাস হতে হবে, পাস করতে হবে আর বাবার পাশে থাকতে হবে তবেই ফুল পাস হয়ে যাবে। বুঝেছ !
এখন মেজরিটি রেজাল্টে দেখা যায় অনেক বিষয়ে তো ভালো করে পাস হয়ে গেছে। শুধু নিজের পুরানো স্বভাব আর সংস্কার, যা কখনো কখনো নতুন জীবনে ইমার্জ হয়ে যায়। নিজের দুর্বল সংস্কার অন্যদের সংস্কারের সঙ্গে সংঘাত হয়। এই দুর্বলতা এখন বিশেষ লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিঘ্ন উৎপন্ন করে। ফুল পাসের বদলে পাস মার্ক দেওয়ায়। না নিজের স্বভাব-সংস্কারকে সঙ্কল্প বা কর্মে আনো, না অন্যদের স্বভাব-সংস্কারের সাথে সংঘর্ষে যাও। দুইয়ের মধ্যে সহন শক্তি আর অন্তর্লীন করার শক্তির আবশ্যকতা আছে। এ’সবের খামতি ফুল পাস হওয়ার সমীপ আসতে দেয় না। আর এটাই কারণ কখনো অসতর্কতা কখনো অলসতা উপস্থিত হয়। তপস্যা-বর্ষে মন-বুদ্ধিকে একাগ্র করতে হবে অর্থাৎ একই সঙ্কল্পে থাকা যে, আমাকে ফুল পাস হতেই হবে। যদি মন-বুদ্ধি একটুও বিচলিত হয় তাহলে দৃঢ়তা দ্বারা আবার তা’ একাগ্র করো। আমাকে করতেই হবে, হতেই হবে। এই সব যা কিছু দুর্বলতা আছে, তা’ তপস্যার যোগ অগ্নিতে ভস্ম করো। যোগ অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয়েছে? একাগ্রতার অগ্নিতে তোমরা এখনো থাকো কিন্তু কখনো কখনো অগ্নি অল্প একটু পার্সেন্টেজে কম হয়ে যায়। নিভে যায় না, কম হয়। গনগনে আগুনে যে কোনো জিনিস যদি দাও তবে হয় তা’ পরিবর্তন হবে অথবা ভস্ম হবে। পরিবর্তন করতে আর ভস্ম করতে, দুইয়ের ক্ষেত্রেই তেজালো আগুন প্রয়োজন। যোগ হলো অগ্নি। একাগ্রতার অগ্নিও জ্বলে আছে, কিন্তু সদাই যেন তেজোময় থাকে। কখনো তেজ, কখনো কম, এমন নয়। যেমন এখানে স্থূল অগ্নিতেও যদি কোনো ভালো জিনিস বানাতে চাও আর টাইমে বানাতে চাও তবে অগ্নিকে সেই অনুযায়ী রাখবে যাতে জিনিস সময়ে ভালোভাবে তৈরি হয়ে যায়। যদি মধ্যিখানে আগুন নিভে যায় তবে সময়মতো জিনিস তৈরি হতে পারবে? যদিও তৈরি হবে তবে সময়ে নয়। তো তোমাদের যোগ অগ্নিও মাঝে মাঝে শিথিল হয়ে যায়, তোমরা সম্পন্ন তো হবে কিন্তু লাস্টে হবে। লাস্টে যারা সম্পন্ন হবে তাদের ফাস্ট আর ফার্স্ট রাজ্য ভাগ্যের অধিকার প্রাপ্ত হতে পারে না। তোমাদের সবার লক্ষ্য থাকে ফার্স্ট জন্মে রাজত্বের ভাগ্যপ্রাপ্ত করার, নাকি দ্বিতীয়-তৃতীয় জন্মে আসবে? প্রথম জন্মে আসতে চাও তো, চাও না?
তপস্যা-বর্ষ অর্থাৎ ফাস্ট পুরুষার্থ করে ফার্স্ট জন্মে ফার্স্ট নম্বর আত্মাদের সাথে রাজত্বে আসা। ঘরে বাবার সাথে ফিরে যেতে চাও তো না? তারপরে ব্রহ্মা বাবার সাথে রাজত্বেও তো আসতে হবে। তাহলে বুঝেছ তপস্যা-বর্ষ কেন রাখা হয়েছে? একাগ্রতার শক্তি বাড়াও। এখনও না চাইলেও ব্যর্থ চলে। ব্যর্থের দিক কখনো কখনো শুদ্ধ শ্রেষ্ঠ সঙ্কল্প থেকে অধিক ভারী হয়ে যায়। সুতরাং তপস্যা অর্থাৎ ব্যর্থ সঙ্কল্পের সমাপ্তি কারণ এই সমাপ্তিই সম্পূর্ণতা নিয়ে আসবে। সমাপ্তি ব্যতীত সম্পূর্ণতা আসবে না। সুতরাং আজ তোমরা তপস্যা-বর্ষ শুরু করছ। উৎসাহ-উদ্দীপনার জন্য বাপদাদা অভিনন্দন জানান। চারটে সাবজেক্টে ফুল পাস হওয়ার মার্কস্ নিতে হবে। এ’রকম মনে ক’রো না তিন সাবজেক্টে আমার ঠিক আছে, শুধু একটাতে কম আছে। ফুল পাস হবে তখন? না, তখন শুধু পাসের লিস্টে আসবে। ফুল পাস হওয়া অর্থাৎ চার সাবজেক্টে ফুল মার্কস্ হওয়া। সদা সব আত্মার প্রতি কল্যাণের ভাবনা, কল্যাণের দৃষ্টি, কল্যাণের বৃত্তি, কল্যাণময় কৃতি। একে বলা হয়ে থাকে কল্যাণকারী আত্মা। শিবের অর্থও কল্যাণকারী, তাই না? সুতরাং শিব জয়ন্তী অর্থাৎ কল্যাণকারী ভাবনা। যাদের কল্যাণের ভাবনা থাকে তাদের জন্য কল্যাণ করা – সে তো অজ্ঞানীও করে। ভালোর সাথে কীভাবে ভালো করে চলতে হয় এ তো সবাই জানে। কিন্তু যাদের বৃত্তি অকল্যাণের তাদেরকে নিজের কল্যাণের বৃত্তির দ্বারা পরিবর্তন করো বা ক্ষমা করো। যদি পরিবর্তন নাও করতে পারো, ক্ষমা তো করতে পারো, পারো না ? তোমরা মাস্টার ক্ষমার সাগর তো না? তোমার ক্ষমা ওই আত্মার জন্য শিক্ষা হয়ে যাবে। আজকাল, শিক্ষা দিলে কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না। এটা (ক্ষমা) করো তো এটাই শিক্ষা হয়ে যাবে। ক্ষমা অর্থাৎ শুভ ভাবনার শুভাশিস দেওয়া, সহযোগ দেওয়া। শিক্ষা দেওয়ার সময় এখন চলে গেছে। এখন স্নেহ দাও, সম্মান দাও, ক্ষমা করো। শুভ ভাবনা রাখো, শুভ কামনা রাখো ― এটাই শিক্ষার বিধি। ওই বিধি এখন পুরানো হয়ে গেছে। তাহলে, নতুন বিধি তোমরা জানো তো না? তপস্যা-বর্ষে এই নতুন বিধিতে সবাইকে আরও সমীপে নিয়ে এসো। তোমাদের বলেছিলাম তো না, কিছু দানা তৈরিও হয়ে গেছে, কিন্তু মালা এখনো তৈরি হয়নি। সুতোও আছে, দানাও আছে কিন্তু সব দানা পরস্পরের কাছাকাছি নেই, সেইজন্য মালা তৈরি হয়নি। আপন রীতিতে দানা তৈরি হয়ে আছে, কিন্তু সংগঠিত রূপে তারা পরস্পর পরস্পরের সমীপ হিসেবে তৈরি হয়নি। সুতরাং তপস্যা-বর্ষে বাবা সমান তো হতেই হবে, কিন্তু দানাকে তো দানার কাছেও আসতে হবে। বুঝেছ? আর তো তোমরা যোগী ছিলে, যোগী আছ, সদা যোগী জীবনেই থাকতে হবে। স্বতন্ত্র অথচ প্রিয় হয়ে ড্রামার সব সিনকে দেখে এগিয়ে চলো। ড্রামার সব সিন প্রিয়। দুনিয়ার লোকের কাছে যা অপ্রিয় সিন, তা’ তোমাদের কাছে প্রিয়। যেটাই ঘটে তার মধ্যে কিছু রহস্য অবশ্যই ভরা আছে। রহস্যকে জানলে কোনোকিছুতে কোনো দৃশ্যে মর্মাহত হবে না। যারা রহস্যকে জানে তারা রুষ্ট হয় না। যারা রহস্যকে জানে না তারা অখুশি হয়।
ডবল বিদেশিও এইবারে শিব জয়ন্তী উদযাপন করতে টাইমে পৌঁছে গেছে। দৃঢ় নিশ্চয় রেখেছ তোমরা ‘যেতেই হবে’ আর এখানে তোমরা পৌঁছে গেছ, তাই না ? যাব কী যাব না – এ’রকম যারা ভেবেছে তারা রয়ে গেছে । এখনো পর্যন্ত কিছুই হয়নি, হবে তো এখন। প্রকৃতি তো এখনও ফুল ফোর্সে অস্থিরতা সৃষ্টি করেনি। শুরু করতে যায়, কিন্তু তোমাদের দেখে খানিকটা ঠান্ডা হয়ে যায়। সেও ভয় পেয়ে যায় যে, আমার মালিক তৈরি হয়নি, কা’র দাসী হবো ? তোমরা নির্ভীক তো না? তোমরা তো ভয় পাও না, তাই না ? লোকে ভয় পায় মরতে আর তোমরা তো মরেই আছ। পুরানো দুনিয়া থেকে তোমরা মরে গেছ তো না? নতুন দুনিয়ায় তোমরা জীবিত, পুরানো দুনিয়াতে মৃত তোমরা, তাহলে যে মৃত তার কি মরণে ভয় লাগবে? তাছাড়া, তোমরা তো ট্রাস্টি, তাই না? যদি কোনরকম আমিত্ববোধ থাকবে তবে মায়া মার্জার (বিল্লি) মিঁয়াউ, মিঁয়াউ করবে। আমি আসি, আমি আসি… ( হিন্দি শব্দ উচ্চারণে ম্যায় আউ, ম্যায় আউ)। যতই হোক, তোমরা তো ট্রাস্টি। এমনকি, শরীরও তোমাদের নয়। মৃত্যুকালের জন্য মানুষের চিন্তা হয়, তাদের জিনিসপত্র বা পরিবারের চিন্তা হয়। তোমরা তো হলে ট্রাস্টি। তোমরা তো স্বতন্ত্রলৌঐথচ, নাকি একটু একটু মোহ-আকর্ষণ আছে? যদি বডি কন্সিয়াসনেস (দেহবোধ) থাকে তো তার মানে একটু একটু আকর্ষণের বোধ আছে। অতএব, তপস্যা অর্থাৎ জ্বালা স্বরূপ, নির্ভীক। আচ্ছা।
অগ্রগণ্য দুই দাদি শুনছেন এবং দেখছেন (দাদিজী এবং দাদি জানকীজী তাঁদের ঘরে মুরলী শুনছেন)। কিছু নবীনত্ব দেখা দরকার তো না ! বাপদাদা আগেও বলেছেন, এক হলো বাণীর দ্বারা সেবা, আরেক হলো ফরিস্তা মূর্তি ও শক্তিশালী স্নেহময়ী দৃষ্টির সেবা। কিছু সময়ের জন্য এঁদের এই পার্ট প্রাপ্ত হয়েছে। আদি থেকে বাণী আর কর্মের সেবা তো করেই চলেছে। এই বিধিতে সেবা করাও ড্রামায় নির্ধারিত রয়েছে, অন্তে এই সেবাই থেকে যাবে। এই পার্ট অল্প সময়ের জন্য এঁদের প্রাপ্ত হয়েছে, তবুও এরা হলেন অগ্রণী বাচ্চা, তাই না ! তাঁদের হিসেব-নিকেশ চুকানোতেও সেবা রয়েছে। হিসেব হল নিমিত্ত, আসল রহস্য হলো সেবা। অসীম খেলায় এটাও এক ওয়ান্ডারফুল খেলা। তাদের উভয়ের পার্ট নবীনত্বের। এরা খুব তাড়াতাড়ি হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে সম্পন্নতা আর সম্পূর্ণতার স্থিতির সমীপে যাচ্ছেন। তিনি একলা যাবেন না – এটা তোমরা কেউ ভেবো না। প্রত্যেককে চুকিয়ে দিতেই হবে, কিন্তু কেউ কেউ শুধু চুকিয়ে দেয়, কেউ কেউ চুকিয়ে দেওয়ার কালেও সেবা করে। সবাই তোমরা বিজয়ী হয়ে গেছ, হয়ে গেছ না ? সবার শুভাশিস রূপী ওষুধ শূল থেকে কাঁটায় পরিণত করে দেয়। হিসেব-নিকেশের প্রভাবে তোমরা আসনি। উভয়েই ঠিক হয়ে গেছে। শুধু সংযমে আছেন। রেস্টও সংযম। যেমন, ভোজনে সংযম থাকে। এই সংযম চলা-ফেরার, বলার সংযম। স্নেহ কী না করতে পারে ! কথিত আছে – স্নেহ পাথরকে জল করতে পারে, তাহলে এই অসুখ বদলে যেতে পারে না? বদলে গেছে তো না ! হার্টের অসুখ বদলে গেছে। পাথর থেকে জল হয়ে গেছে, তাই না ! এতো তোমাদের সবার ভালোবাসা। আর এখন শুধু জল থেকে গেছে, পাথর শেষ হয়ে গেছে। রেস্টে থাকায় উভয়ের মুখ ঝলমল করতে শুরু করেছে। পরিবারের প্রীতি-শুভেচ্ছা অনেক সহায়তা করে। আচ্ছা।
চারিদিকের সকল আত্মাদের যারা বিশ্ব কল্যাণের ভাবনা রাখে, চারিদিকের যারা এমন দৃঢ় সঙ্কল্প রাখে, যারা তপস্যা দ্বারা নিজেদের এবং বিশ্বকে পরিবর্তন করে, একাগ্রতার শক্তি দ্বারা তেজোময় ও একরস স্থিতিতে থাকে, এ’রকম তপস্বী আত্মাদের, স্নেহী আত্মাদের, সদা বাবার সাথে থাকা আত্মাদের, সদা ভিন্ন ভিন্ন বিধিতে সেবায় সাথী হওয়া বাচ্চাদের পরমাত্মার মহা-জয়ন্তীর অভিনন্দন আর স্মরণ-স্নেহ গ্রহণ করো আর সেইসঙ্গে নমস্কার।
বরদানঃ-
যে বাচ্চারা অষ্ট শক্তিতে সম্পন্ন তারা সব কদমে সময় অনুসারে, পরিস্থিতি অনুসারে সব শক্তিকে কার্যে প্রয়োগ করে। তাদের অষ্ট শক্তি ইষ্ট আর অষ্ট রত্ন বানিয়ে দেয়। এইভাবে অষ্ট শক্তিসম্পন্ন আত্মারা যেমন সময়, যেমন পরিস্থিতি সে’রকম স্থিতি সহজে বানিয়ে নেয়। তাদের প্রতি কদমে সফলতা সমাহিত হয়ে থাকে। কোনও পরিস্থিতি তাদেরকে শ্রেষ্ঠ স্থিতি থেকে নিচে নামিয়ে আনতে পারে না।
স্লোগানঃ-
➤ Daily Murlis in Bengali: Brahma Kumaris Murli Today in Bengali
➤ Email me Murli: Receive Daily Murli on your email. Subscribe!